চিত্র ঘরানায় পট

স্প্রে পেন্টিং, থ্রি ডি  পেন্টিং, অয়েল পেন্টিং, স্কাল্পচার, স্যান্ড পেন্টিং  ইত্যাদি র মতো লোক চিত্রকলার একটি প্রাচীন আট্  ফর্ম,  হল পটচিত্র। চিত্রকলা বলতে মানুষ  বোঝে এমন একটি শিল্প, যা অনেক না বলা কথার প্রমাণ  সরূপ। কিন্তু এই শিল্প কথা বলতে পারে না, সঙ্গীত শিল্পীদের ন্যায়ের  গান গাইতে পারে না, অভিনয় শিল্পীদের ন্যায়ের হাসতে-কাঁদতে  পারে না, কিন্তু তবুও বাকি শিল্পের ন্যায়ের রং তুলির আঁচড়ে শিল্পীদের হাতের যাদুতে শিল্পসত্তার প্রকাশ ঘটায়, যা দশকের মনের গভীরে দাগ কাটতে পারে।
লোক চিত্রকলার প্রাচীনতম আঙ্গিক পটচিত্র হল চিত্রকলা ঘরানা র এক অন্য জাত। পট শব্দের অর্থ হল ক্লোদ বা কাপড় আর চিত্র হল অঙ্কন বা আঁকা। মুল আকর্ষণ হল কাপড় রূপী কাগজের উপর এই পট আঁকা হত এবং সাথে থাকত পটুয়া দের গান। এই পটচিত্রের রূপ হল যে কোন কাহিনী বর্ণনা করা বা একটি গল্প বলা। এই পটচিত্র যারা আঁকেন তাদেরকে পটুয়া বলা হয়। বর্তমানে  পটচিত্র কে নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা হলেও  প্রথম দিকে পটুয়া দের পট আঁকার বিষয়  ছিল বিভিন্ন দেবতা দের কাহিনী। রামায়ণ  মহাভারত-এর বিভিন্ন  চরিত্র অথাৎ রাবন বধ, রাম-সীতার বিয়ে, পঞ্চ পাণ্ডব কাহিনী, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, বেহুলা-লক্ষীন্দর, সাবিত্রী-সত্যবান  প্রভূত দেবতা লীলা কেন্দ্রিক  কাহিনী তথা শিব-দূগা , গনেশ, কাত্তিক, মা মনষা, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য, দেবতা যমের গল্প সহ প্রমুখ  গল্পকে  কাহিনী আকারে খুব সুন্দর করে ধীরে ধীরে বিশ্লষণ করে চিত্রনের আঙ্গিকে চিত্রিত করা হয় কাগজের উপর। চিত্রকলা র এই আঙ্গিককেপটচিত্র বলা হয়।
প্রাথমিক ভাবে একটা দীর্ঘ লম্বা  সাদা কাগজের উপর এই পট আঁকা হত। গল্পের মধ্যে থাকা প্রতিটি ঘটনাকে পর পর চিত্রে তুলে ধরা হত। তাই  স্বাভাবিকভাবেই একটি চরিত্রের গা ঘেঁষেই অন্য চরিত্রটি আঁকা হত,যাতে প্রতিটি ঘটনার সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়।
এরপর প্রতিটি ঘটনার পিছনে থাকা গল্পকে গানের ছলে পটুয়ারা বলতে থাকে। ফলে মনোমুগ্ধকর চিত্র কাহিনীর পাশাপাশি সঙ্গীতের স্পর্শ এক নব রূপে চিত্র ঘরানা র কথা বলে।

Comments

Popular posts from this blog

পট চিত্রের রকমফের

পটের উপাদান (রং,কাগজ)

কালীঘাটের পট (পট চিত্রের বিশেষ রকমফের)